স্পেন টু আমেরিকা (স্পেনের পতন ও আমেরিকা আবিষ্কারের ইতিহাস)
১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারির তৃতীয় প্রহর ছিল মুসলিম ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বেদনাময় মুহূর্ত। এ সন্ধ্যাটা ছিল মুসলিম উম্মাহর উপর সবচে ঘনকালো সন্ধ্যা। এ সন্ধ্যার পর হতাশার যে রাত এসেছিল, আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সেখানে ভোরের আলো ফুটে ওঠেনি। সেই লাঞ্ছনার বিকেলে গ্রানাডার নয়নাভিরাম প্রশস্ত মসজিদগুলোর মর্মরস্বচ্ছ ফ্লোর ইসাবেলা-বাহিনীর অশ্ব আর খচ্চরের মলমূত্রের আস্তাবলে পরিণত হচ্ছিল।
মসজিদের আঙিনা হয়ে উঠেছিল তার বাহিনীর অস্ত্রাগার। সেদিন সন্ধ্যায় মসজিদসমূহ থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল মাগরিবের আজানের পরিবর্তে হৃদয়বিদারক কান্নার কোরাস। সাথে শোনা যাচ্ছিল মদ্যপ উন্মাদ খ্রিষ্টান সৈনিকদের মাতলামির মিছিল। গ্রানাডার এখানে-ওখানে দেখা যাচ্ছিল আগুনের কুণ্ডুলি। সে আগুনে জ্বলছিল মুসলমানদের কুরআন-হাদিসসহ হাতে লেখা অসংখ্য পাণ্ডুলিপি ও ইলমি উত্তরাধিকার।
আবদুর রহমান আদ দাখিল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গ্রানাডার কেন্দ্রীয় পাঠাগারের ৩ লাখ গ্রন্থের বিশাল ভান্ডার পুড়ানোর ধোঁয়ায় গ্রানাডার আকাশ যে কালো রূপ ধারণ করেছিল মুসলমানদের দুর্ভাগ্যের কালিমা এর চেয়ে মোটেও কম ছিল না। অসহায়ত্ব ছিল এমনই করুণ, শরয়ি দাঁড়িতে সজ্জিত চেহারাগুলোতে ছিল হাহাকার আর কান্নার ছাপ। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নারত অশ্রুধোয়া বৃদ্ধরা ছিল গ্রানাডার বাজারে নাপিতের দোকানে দাঁড়ি কাটানোর জন্য লাইন ধরে দাঁড়ানো। একদিকে ওরা অশ্রুধোয়া দাঁড়ি নিয়ে স্পেনের বাজারে হাহাকার করছিল, অপরদিকে খ্রিষ্টান মদ্যপ সৈন্যরা তাদের বিজয়ে আনন্দ-মিছিল দিচ্ছিল।
জাতির ঘাড়ে চেপে বসে লাঞ্ছনার, লজ্জার, অসহায়ত্বের সিন্দাবাদীয় ভূত। মুসলমানরা কোনো দিক দিয়েই নিরাপদ ছিল না। সম্ভ্রম হরণ এই মাত্রায় চলছিল যে, খেদ করে বলা হচ্ছিল—আহ, যদি মাটি ফেটে যেত কিংবা আসমান ভেঙে পড়ত। যে সম্ভ্রমশীলা মুসলিম রমনীরা তাদের স্বজাতির অতি আপনজন থেকে পর্দা পালন করে চলতেন, সেদিন তারা স্পেনের বাজারে খোলা মাথায় ঘোরাফেরা করতে ছিলেন বাধ্য। তাদের পেছনে ঘোড়া দৌড়িয়ে আসছিল মদ্যপ মাতাল খ্রিষ্টান সৈন্য। ওরা এই অসহায় নারীদের কাছে পৌঁছে মুখভরা মদের কুলি তাদের মাথায় ছড়িয়ে দিয়ে বিকৃত উল্লাসে হেসে উঠছিল।
আপনি যদি প্রতিটি নতুন বই সবার আগে পেতে চান, তাহলে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকুন 👉👉 Join করুন