ফেরা বই pdf download
ফেরা “অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদে লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, সরল পথ বাতলে দেন।”[সূরা বাকারাঃ২১৩]
বইটা পড়ছিলাম আর বার বার ফিরে যাচ্ছিলাম আমার অতীতের দিনগুলাতে। দ্বীনের পথে আসার পর থেকে অতীতের চাইতে হাজার গুণ সুখে আছি,শান্তিতে আছি।আলহামদুলিল্লাহ।ওয়াল্লাহি,ঐ দিনগুলা একটুও মিস করি না।তবে কেন জানি যখনই কারো ফিরে আসার গল্প শুনি/পড়ি কলিজাটা ধুমড়ে মুচড়ে উঠে।মনে পড়ে যায় সেই দিনগুলা…।আর সেই ফিরে আসা মানুষগুলাকে মনে হয় আমার আত্মার আত্মীয়।
বইটার লেখিকা দুই বোন।”ফেরা” নামক বইয়ের প্রথম অংশে তারা ব্যক্ত করেছেন তাদের জীবনের শুরুতে মুসলিমদের প্রতি জন্ম নেওয়া ঘৃণা,বিদ্বেষ,ক্ষোভ।তারপর একটা সময় চির সত্যের পথে তাদের ফিরে আসার গল্প।সংগ্রামের গল্প।মনের মত করে দ্বীন পালন করতে পারার আকুতি।
বইটা পড়ার সময় কয়েকটা জায়গায় এসে আটকে যাচ্ছিলাম বার বার।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।বিশেষ করে রামাদ্বানের গল্পগুলা আমায় নস্টালজিক করে তুলছিল।রামাদ্বানে লেখিকার রাব্বের আরো কাছে যাওয়ার প্রয়াস-প্রচেষ্টা মনে করিয়ে দিচ্ছিল আমার জীবনের প্রায় বছর চারেক আগের কোন এক রামাদ্বানের কথা।মধ্যরাতে আমি আর আমার বোনেরা মিলে ডিসিশান নিয়েছিলাম ফোন থেকে সব মিউজিক ডিলিট করে দেওয়ার।নিজ হাতে সাজানো বাংলা আর হিন্দি গানের ফোল্ডারগুলা ডিলিট দিয়েছিলাম সেদিন।দিনের বেলা টিভির নিচে সাজিয়ে রাখা সেই ছোটবেলা থেকে জমানো সবগুলা সিডি আর ডিভিডির ক্যাসেট নিয়ে দাড়িয়েছিলাম ছাদের উপর।ঘরের পেছনের ছোট্ট খাদে ক্যাসেটগুলা ছুড়ে ফেলার আগে পেছন ফিরে আপুকে বলেছিলাম, “আপু ফেলে দিব?”আপু বলেছিল,”ফেলে দিব মানে???বুঝতে পারছি তুই পারবি না,আমার হাতে দে।আমি বলেছিলাম, “না না আমিই ফেলবো।” সেদিন সর্বশক্তি দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম সখের সব ক্যাসেটগুলা।বাবাই বলে বিদায় জানিয়ে ফিরে এসেছিলাম মিউজিক আর মুভির দুনিয়া থেকে।
যখন নাইলা আপুর বর্ণনাগুলো পড়ছিলাম মনে হচ্ছিল এ যেন আমারই প্রতিচ্ছবি।উনার সাথে আমার অনেক মিল।পার্থক্য এটুকুই উনি রিভার্টেড মুসলিমাহ আর আমি রিকানেক্টেড।দ্বীনের পথে আসার ক্ষেত্রে উনার বোনের প্রভাব যেমন মুখ্য ছিল আমার বেলায়ও ছিল অনেকটা সেই রকম।
যখন কোন মেয়েকে দেখি নিজ পরিবারের কারণে দ্বীন পালনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তখন খুব খারাপ লাগে।ইচ্ছে করে তাদেরকে আমার বাসায় নিয়ে আসি।নাইলা আপু আর সিহিন্তা আপুর কাহিনী পড়ে ইচ্ছা করছিল উনাদেরকেও আমার বাসায় নিয়ে আসি আর বলি,”যেই সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীটা সৃষ্টি করেছেন আমার বাসাটাও সেই সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি।এখানে সৃষ্টিকর্তার বিধান মানতে আপনাদের কেউ বাধা দিবে না।কিছু বলবে না।কিচ্ছুটি না।ইচ্ছা মত নামাজ পড়েন,রোজা রাখেন,পর্দা করেন।”
কিন্তু তার আর প্রয়োজন হয় নাই।আল্লাহ উনাদের সাহায্য করেছেন ইউসুফ আর শরিফ আবু হায়াত অপুর মত দুজন মানুষকে পাঠিয়ে।যখন উনাদের আগমনের কাহিনী পড়ছিলাম মনে হচ্ছিল সিনেমা দেখছি।ভাবছিলাম অবশেষে হিরোদের আগমন ঘটলো।আমার মতো মুসলিম পরিবারের মেয়ে ইউসুফ আর অপুর অনুপস্থিতিতে ভাইদের কাধে মাথা রেখে দিব্যি জীবনটা পার করে দিতে পারবে,আলহামদুলিল্লাহ।কিন্তু উনাদের তো সেরকম কোন ঠাই ছিল না।পরিবারের সবার চোখ ফাকি দিয়ে উনাদের নামাজ পড়তে হয়েছে,কখনো না খেয়ে রোজা রাখতে হয়েছে,কখনো বা ইফতার না করেই রোজা ভাঙ্গতে হয়েছে।ওড়না মাথায় দিতে গিয়েও লোকোচুরি করতে হইছে পরিবারের মানুষগুলার সাথে।ভাবলেই গা শিউরে উঠে।এমন পরিস্থিতিতে ঐ হিরোদের আগমন যে বড্ড প্রয়োজন ছিল।
সেদিন বান্ধবি বলছিল,”তাইবা নিক্বাব নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি।পরিবার থেকে কোন সাপোর্টই পাই না।দোয়া করিস আমার জন্য,আমার পরিবারের হিদায়াতের জন্য।”ওর হাতে “ফেরা” ধরিয়ে দিলাম।আর বললাম,”আমরা অনেক সুখে আছি রে বান্ধবী।বইটা পড়লে বুঝতে পারবি দ্বীন পালন করার জন্য মানুষ কত কষ্টই না করতেছে।কত ধৈর্য্যই না ধরতেছে।আলহামদুলিল্লাহ আমরা মুসলিম পরিবারে জন্মেছি বলে।”
দ্বীনের পথে আসার পর একটা মানুষ নিজের ব্যাপারে যতটুকু শান্তি অনুভব করে তার চাইতে দ্বিগুণ অশান্তিতে ভোগে তার পরিবারের মানুষগুলার কথা চিন্তা করে।হোক সে রিভার্টেড কিংবা রিকানেক্টেড।আল্লাহর রহমতে সে ফিরে আসলেও তার কাছের মানুষগুলা যখন রয়ে যায় জাহিলিয়াতে নিমগ্ন তখন সেই ফিরে আসা মানুষটি ছটফট করতে থাকে তার প্রিয় মানুষগুলাকে হিদায়াতের পথে দেখার জন্য।এমন ছটফট করনেওয়ালা অসংখ্য হৃদয় আমি দেখেছি।দেখেছি তাদের ছলছল করা চোখ।চোখের পানি।খুব কাছ থেকে দেখেছি তাদের।আই ক্যান ফিল দ্যাম।আই ক্যান ফিল দেয়ার ব্লিডিং হার্টস…
“আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন।”[২৮:৫৬]
আল্লাহর কাছে সব সময়ই চাই যাতে প্রতিটি প্রিয় মানুষ ফিরে আসে হিদায়াতের সুশীতল ছায়ায়।
সমালোচনাঃ কোরআন-হাদিসের বাইরে অন্যান্য বইয়ের জগতে সদ্য ফিরে আসা এক পাঠক আমি।এই জগতের বইয়ের কোন ভুল বের করার মত জ্ঞান এখনো হয়ে উঠেনি।আরো ৫/১০ টা বই পড়লে হয়তো সমালোচনা করার মত কিছু খোঁজে পেতাম।হয়ত বা।হয়ত না।
যাইহোক,কাভারটা অনেক ভালো লেগেছে।কালো হচ্ছে আমার প্রিয় রঙ।আর সাদা কালোর কম্বিনেশান সবসময়ই আমায় টানে।তার উপর ছোট্ট একটা পাখি হেলায় হেলায় সকালটা পার করে সন্ধ্যা নামার আগে ফিরে এসেছে তার আপন নীড়ে…
আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।চোখ দুইটা বুজে আসতেছে।চোখ বন্ধ করে দু’হাত প্রশস্ত করে মুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সব্বাইকে আহবান করে বলতে ইচ্ছা করছেঃ হে প্রশান্ত মন,তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।আর অন্তর্ভূত হয়ে যাও সেইসব সফলকামদের যাদের কাছে সত্য উপস্থিত হলে তারা বলে,”সামি’না ওয়া আত্বা’না।”
আপনি যদি প্রতিটি নতুন বই সবার আগে পেতে চান, তাহলে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকুন 👉👉 Join করুন