বইটির ডাউনলোড লিংক নিচে দেওয়া আছে
বইঃ নারী ও পুরুষ পরস্পরের বন্ধু ও অভিভাবক
লেখক : মাসুদা সুলতানা রুমী
প্রকাশনী : আহসান পাবলিকেশন
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন
ছেলে ও মেয়ে পরস্পরের বন্ধু হতে পারে কি?
এ বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার মনে করি যে, দায়িত্ব ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে ইসলামে নারী ও পুরষ কখনো এক নয়। নিজ নিজ সক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে পুরুষ যেমন স্বতন্ত্র, একজন নারীর ক্ষেত্রেও টিক একই বিষয় প্রযোজ্য।
প্রতিটি পুরষ নারীদের জন্য একেকজন অভিভাবক যারা তাদের অধীনস্ত নারীদের প্রয়োজন মেটাবে, তাদের বুঝবে, তাদের সহযোগিতা করবে এবং তাদের সামগ্রিক বিষয়সমূহে পরিচালনা করবে। একইভাবে, নারীদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের স্বামী এবং তার ঘর সামলে রাখা, সন্তানসন্ততির লালন পালন করা এবং স্বামীর কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।
এখন, বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যেমন নর নারীর ভিন্নতা আছে তেমনি শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রেও তাদের ভিন্নতা অবশ্যই বিদ্যমান। নারী পুরষের সাধারাণ যোগাযোগ ও মেলামেশার ক্ষেত্রে ইসলামে কোন বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু বিশেষ সম্পর্ক ও মেলামেশার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ অবশ্যই রয়েছে।
ভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির মানুষের মাঝে যদি পারস্পারিক সদ্ভাব ও আচরণ বজায় থাকে তবে তাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গঠনে ইসলাম মানুষকে আরো উৎসাহিত করেছে।
উপরে সকল বর্ণিত পন্থায় পারস্পারিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে শারীরিক মেলামেশায় অবশ্যই অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একজন পুরুষ কোন গাইরে মাহরামকে তথা যাদের সাথে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তাকে কোন অবস্থাতেই স্পর্শ করতে পারবে না।
খুব প্রয়োজনে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষকে যোগাযোগ করতে হয় তবে তার বিধান হচ্ছে নারীকে অবশ্যই যথোপযুক্ত পোশাক পরিধান করতে হবে এবং ইসলাম নির্ধারিত পন্থায় তার কথা বলতে হবে। আর কোন অবস্থাতেই তৃতীয় কোন ব্যক্তির উপস্থিতি ছাড়া নির্জন স্থানে যেতে পারবে না।
দুইটি আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কোর’আনে নারী ও পুরুষের যোগাযোগের বিধান বর্ণনা করেছেনঃ
“নবী! মু’মিন পুরষদের বলুন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত বা নত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য অনেক বেশি পবিত্র পদ্ধতি। তারা যা করে আল্লাহ তা জানেন। আর হে নবী! মু’মিন নারীদের বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা পর পুরুষকে না দেখায়, যা নিজে থেকে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া। আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল দিয়ে তাদের বক্ষ ঢেকে রাখে। তারা যেন তাদের সাজসজ্জা নিম্নোক্তদের সামনে ছাড়া প্রকাশ না করে, (তারা হচ্ছেন) তার স্বামী, বাপ, স্বামীর বাপ, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, মহিলারা নিজেরদের মাঝে, নিজের দাস দাসী, অধীনস্ত পুরুষদের যাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই, এবং এমন শিশুদের সামনে যারা মেয়েদের গোপন বিষয় সম্পর্কে এখনো অবগত নয়। তারা যেন নিজেদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের লক্ষ্যে জমিনে সজোরে পা ফেলে না চলে। হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। (নূরঃ ৩০-৩১)
উপরের আয়াতদ্বয়ে বর্ণিত সকল পদ্ধতি অনুসরণ করে নারীগণ প্রয়োজনে বাহিরেও যেতে পারবেন এবং অন্যদের সাথে কাজও করতে পারবেন। নারী পুরুষের যে কোন ধরণের মেলামেশা যা মানব মনে খারাপ বা কুমন্ত্রণার সৃষ্টি করতে পারে সেটাই হারাম।
এর মানে কিন্তু এইটা না যে, নারীগণ একই জায়গায় পুরুষদের সাথে যেতে বা থাকতে পারবে না। ঐতিহাসিক সূত্রগুলো এই সাক্ষ্য দেয় যে মসজিদ এমনকি বাজারেও নারীগণ পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করেছেন। মসজিদে নারীগণ পুরুষদের পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে পারবে। যদি উপরে বর্ণিত শর্ত মেনে চলা হয় তবে মেয়েরাও ছেলেদের সাথে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে। সামাজিক মিলনকেন্দ্রগুলোতে নারীদের অবশ্যই অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে যেন তাদের কোন আচরণ তাদের মেলামেশাকে রোম্যান্টিক সম্পর্কের দিকে না নিয়ে যায়।
নিচের এ আয়াতদ্বয়ে নারী পুরুষের যোগাযোগের পদ্ধতি কেমন হবে সে বিষয়ে বলে দেয়া আছেঃ
তাই যদি আমরা নারী পুরুষের একত্রে চলাফেরা বন্ধ করে দেই তবে আমাদের জীবন পরিচালনা খুব কষ্টকর হয়ে যাবে। উন্মুক্ত পরিবেশে সাধারণত অন্যকোন কুমন্ত্রণার সুযোগ থাকে না। তথাপি যদি উপরে বর্ণিত সকল পন্থা মেনে চলা হয় তবে নারী পুরুষ পারস্পারিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে পারবে।
আপনার বন্ধুর ব্যাপারে যা বলেছেন, আপনি তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন যে ইসলামে বান্ধবী গ্রহণের কোন ধারণা পচলন নেই। বন্ধুত্ব অবশ্যই কাজ, লেখাপড়া ও পারিবারিক গণ্ডির মাঝেই সীমাবদ্ধ হওয়া উচিৎ বা হতে হবে। যৌন উদ্দীপনা একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয় যা সকল মানুষের মাঝেই বিদ্যমান। শুধুমাত্র ইসলামেই এ বিষয়ে বিবাহের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করার ব্যবস্থা আছে ।